পরিবারে নতুন একটি শিশুর
আগমন অনেক আনন্দের। জন্মের পর থেকেই ছোট্ট শিশুকে সুস্থভাবে গড়ে তোলার
জন্য মায়ের সাবধানতার অন্ত নেই। শিশুর ঘুম, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে
প্রতিটি বিষয় অনেক যত্ন সহকারে করেন একজন মা। তেমনি শিশুর জন্য ব্যবহৃত
প্রতিটি জিনিস নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতার শেষ নেই বাবা-মায়ের। সেরকমই
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিশুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন
রাখা। শিশুদের ত্বক হয় নমনীয় ও সংবেদনশীল। তাই তাদের প্রসাধনী ব্যবহারে
যেমন গুরুত্ব দেওয়া উচিত, ঠিক তেমনি শিশুর জামা-কাপড়ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন
রাখা উচিত।
১. ব্যবহারের আগে ধোয়া
শিশুদের ত্বক স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি নমনীয় ও পাতলা। তাই তাদের জামাকাপড় অত্যন্ত সাবধানতার সাথে বাছাই করতে হয়। নতুন কাপড় না ধুয়েই ব্যবহার করাটা আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক একটি বদঅভ্যাস। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের ধারণা হলো, ‘নতুন কাপড়ে কোনো জীবাণু থাকতেই পারে না’। প্রকৃতপক্ষে এটি বড় রকমের একটি ভুল ধারণা। কেননা নতুন পোশাকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ট্রেস থাকতে পারে। যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতাছাড়া যেহেতু নতুন ড্রেস বাইরে থেকে কেনা হয় সেহেতু এতে জীবাণু থাকতেই পারে। তাই ব্যবহারের আগে অবশ্যই শিশুর জামাকাপড় ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন। এছাড়া শিশুর আসবাবপত্রগুলোও ব্যবহারের আগে ধুয়ে ব্যবহার করা উচিত।
২. শিশুদের জন্য নিরপেক্ষ ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন
সাধারণত আমাদের দেশে বাচ্চাদের কাপড় ধোয়ার জন্য আলাদা কোনো ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয় না। পরিবারের সবার ব্যবহৃত ডিটারজেন্ট দিয়েই ধোয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, “আপনার শিশুর ত্বক যদি খুবই সংবেদনশীল বা এলার্জিযুক্ত না হয় তাহলে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই”। যদি ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতেই হয় তাহলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামরতাছাড়া আপনার যদি মনে হয় যে নিয়মিত ডিটারজেন্ট ব্যবহারে শিশুর ত্বকে ক্ষতি হতে পারে, তাহলে প্রথমে সেই ডিটারজেন্ট দিয়ে শিশুর দু’একটি কাপড় ধুয়ে দেখুন। সেই কাপড়গুলো ব্যবহার করায় যদি আপনার শিশুর ত্বকে জ্বালা করে, অস্বস্তিবোধ করে অথবা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সেই ডিটারজেন্টটি এড়িয়ে যান এবং এমন একটি ডিটারজেন্ট নির্বাচন করুন যেটিতে কোন ধরনের রং বা পারফিউম থাকবে না। এতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে আপনার সন্তানের কমপক্ষে ১ বছর না হওয়া পর্যন্ত তার পোশাক শুধুমাত্র লন্ড্রি সাবান দিয়ে ধুয়ে নেবেন।
৩. সর্বদা কেয়ার লেবেল পড়ুন
সবসময় যেকোনো কাপড় ধোয়ার আগে কাপড়টির কেয়ার লেবেলটি পড়ে নেবেন। একেক ধরনের কাপড়ের যত্নের নিয়ম একেক রকম। যেমন :সুতি কাপড় যেভাবে ধোয়া যায় সেভাবে কখনো লিলেন বা সিল্ক জাতীয় কাপড় ধোয়া যায় না। সেজন্য এগুলোর আলাদা আলাদা ধোয়া এবং যত্নশিশুদের কাপড় বেশিরভাগ সময় কোমল, নরম এবং পাতলা হয়। এগুলো ধোয়ার আগে কেয়ার লেবেলটি মনযোগ সহকারে পড়ুন। কাপড় ধোয়ার নির্দেশাবলী অনুসরণ ছাড়াও কাপড় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য শুকানো ও যত্ন করার নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। অন্যসব বিষয়ের মতোই কেয়ার লেবেল আপনাকে বাচ্চাদের পোশাকের যত্নের সুস্পষ্ট ধারণা দেবে। করার নিয়ম আছে।
৪. ফ্যাব্রিক সফটনার থেকে দূরে থাকুন
শিশুদের কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে ফ্যাব্রিক সফটনার এড়িয়ে চলুন। কেননা ফ্যাব্রিক সফটনার এক ধরণের রাসায়নিক উপাদান থেকে তৈরি। শিশুদের যথাসম্ভব সম্ভাব্য ক্ষতিকারক পদার্থ থেকে দূরে রাখা উচিত। তাই খুব প্রয়োজন ছাড়া তাদের জন্য রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করবেন না। বাচ্চাদের এই ধরণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করার অন্যতম উপায় হলো ‘অপরিহার্য নয়’ এমন সকল জিনিস থেকে দূরেসুতরাং, শিশুর পোষাক এবং অন্যান্য আইটেমগুলো যা আপনার শিশুর নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে কোনোভাবেই ফ্যাব্রিক সফটনার ব্যবহার করা যাবে না। থাকা।
৫. শিশুর কাপড়ের দাগ উঠানোর নিয়ম
ছোটদের কাপড়ে দাগ লাগা একটি স্বাভাবিক বিষয়। তাদের খেলাধুলা, খাবার খাওয়া ইত্যাদি করার সময় কাপড়ে দাগ লেগে যায়৷ সাধারণত দাগ লাগার সাথে সাথে ধুয়ে না ফেললে সেটা বাজেভাবে কাপড়ে বসে যায়। যেটা পরে উঠাতে অনেক কষ্ট হয়। তাই দাগ হওয়ার সাথে সাথে যতটা সম্ভব স্টেইনলেস পদার্থ দিয়ে অপসারণ করতে ভুলবেন না। এছাড়াও কিছু ভিন্ন উপায়ে কাপড়ের দাগ অপসারণ ক· শিশুর খাবারের দাগ অপসারণের জন্য পরিষ্কার পানিতে কাপড় ভিজিয়ে রাখুন এবং পরে যেকোনো স্টেইন রিমোবাল পদার্থ দিয়ে ধুয়ে ফেল· শিশুদের প্রস্রাবের দাগ অপসারণের জন্য এক কাপ পানিতে ১ চা চামচ অ্যামোনিয়াকে পাতলা করে দাগের স্থানে প্রয়োগ করুন।· তেলের দাগ অপসারণ করতে সর্বপ্রথম শুধুমাত্র হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নিন৷ তাতেও না গেলে সাবান ব্যবহার করুন।
৬. কাপড় ও ডায়াপার আলাদাভাবে ধোয়া
কাপড় ও ডায়াপার কখনো একসাথে ধুবেন করবেন না। কেননা ডায়াপারে অনেক জীবাণু থাকে। তাই জীবাণু থেকে রেহাই পেতে ভেজা, ময়লা কাপড় থেকে ডায়াপার পৃথক রাখুন। ওয়াশিং মেশিনে এগুলো সব একসাথে ধোয়া আর ভালো কাপড়গুলোকে ময়লা করে ফেলা একই ডায়াপার প্রথমে ঠাণ্ডা পানি এবং পরে গরম পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিলে অনেকটা জীবাণুমুক্ত হয়ে যায়।
৭. শিশুর কাপড় গুছিয়ে রাখুন
শিশুর জামাকাপড় ধোয়ার পর এটি শুষ্ক কোনো স্থানে গুছিয়ে রাখুন। মনে রাখবেন শিশুর কাপড়ে কখনো অপ্রয়োজনীয় পারফিউম ব্যবহার করবেন না। এটি শিশুর ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকাতাছাড়া আপনার শিশুকে আকর্ষণীয় দেখাতে জামাগুলো ইস্ত্রি করে রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই কাপড়ের যত্ন লেবেলটা পড়ে নেবেন। সুন্দর পোশাক সুন্দর ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। তাই আপনার সাথে সাথে আপনার শিশুর জামাকাপড়ের দিকেও লক্ষ্য রাখুন এবং তাদের যত্ন নিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন