চুল আমাদের সৌন্দর্যের অনেক বড় একটা অংশ বহন করে। আর সেই চুলই যদি ক্রমাগত
ঝরে গিয়ে মাথায় টাকের সৃষ্টি করে তাহলে কী আর দুঃখের সীমা থাকে? চুল
পড়া নিয়ে আমাদের চিন্তার অন্ত নেই। আজকের দিনে আমরা মোটামুটি সবাই এই
সমস্যায় ভুগছি। চুল পড়ার নানান কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে
দুশ্চিন্তা, অপর্যাপ্ত ঘুম, অতিরিক্ত কাজের চাপ, অসুস্থতা, বংশগত সমস্যা,
পরিবেশের প্রভাব ইত্যাদি। আর এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য ক্যাস্টর
অয়েল হতে পরে অনন্য একটি উপায়।
চুল পড়া রোধে ক্যাস্টর অয়েল
– চুল পড়ার একটি অন্যতম কারণ হলো
স্ক্যাল্পের ইনফেকশন এবং ডিসঅর্ডার। ব্যাক্টেরিয়া, ফাঙ্গাস স্ক্যাল্পকে
আক্রান্ত করে দিনে দিনে চুল ঝরাকে বাড়িয়ে দেয় এবং চুলের বৃদ্ধিকে হ্রাস
করে। ক্যাস্টর অয়েলের এন্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং এনটিফাঙ্গাল প্রপার্টিস
স্ক্যাল্পের ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে যা চুল পড়া কমিয়ে আনে
অনেকটাই।
– শুষ্কতা বা রুক্ষতা চুল পড়া এবং চুল
ভাঙ্গার আরেকটি প্রধান কারণ। ক্যাস্টর অয়েল সহজেই স্ক্যাল্পে শোষিত হয়।
ফলে স্ক্যাল্পের ময়েশ্চার এবং নিউট্রিশনের ব্যালেন্স ঠিক থাকে যা চুলের
শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে।
নতুন চুল গজাতে ক্যাস্টর অয়েল
– ক্যাস্টর অয়েল স্ক্যাল্পে ভালো মতো
ম্যাসাজ করলে এটি স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। স্ক্যাল্পের
রক্ত সঞ্চালন যত বাড়বে এর অবস্থা তত উন্নত হবে এবং হেয়ার ফলিকলগুলো আরও
সুস্থ্য থাকবে। ফলে তা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
-ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট
যা চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য উপকারী। এন্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রধান
কাজ-ই হলো চুলের এবং স্ক্যাল্পের বিষাক্ত পদার্থ হ্রাস করে চুলের বৃদ্ধিকে
তরান্বিত করা।
– ক্যাস্টর অয়েল ওমেগা ৯ ফ্যাটি আসিড এবং
এসেন্সিয়াল ভিটামিনস এ সমৃদ্ধ যা চুল কে মজবুত এবং উজ্জল করে ও পুনরায়
চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ব্যবহারবিধি
– যেহেতু ক্যাস্টর অয়েল খুব ঘন তাই এটি
চুলে লাগানোর পূর্বে রেগুলার চুলের তেল (কোকোনাট অয়েল, অলিভ অয়েল, আমন্ড
অয়েল) এর সাথে মিশিয়ে লাগালে সুবিধা হবে। স্ক্যাল্পে ভালো মতো ম্যাসাজ
করে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা রাখতে হবে। তেল লাগানোর পর হেয়ার ক্যাপ অথবা হট
টাওয়েল চুলে পেঁচিযে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এরপর চুলে শ্যাম্পূ করে
কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। আরও ভালো ফল চাইলে তেল লাগিয়ে সারা রাত রেখে
দিতে পারেন।
– চুলের গ্রোথ বাড়ানোর জন্য হট অয়েল
ট্রিটমেন্ট হিসেবেও ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে তেল
গরম করে নিতে হবে। প্রক্রিয়া টি সহজ করার জন্য ক্যাস্টর অয়েলের বোতলটি
গরম পানির একটি গ্লাসে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর স্ক্যাল্পে ভালো মতো
ম্যাসাজ করূন।
উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করলে আশা করি এক মাসের মধ্যেই ফল পাবেন।
ক্যাস্টর অয়েল এর কিছু হেয়ার মাস্ক
– এক চা চামচ মধু, দুই চা চামচ ক্যাস্টর
অয়েল এবং একটি ডিম ভালো মতো মিশিয়ে চুলে ভালো মতো লাগান। এক ঘণ্টা পর
শ্যাম্পূ করে ফেলুন। এটি আপনার নিষ্প্রাণ এবং রুক্ষ চুলের উজ্জলতা বাড়িয়ে
একে নরম করবে।
– সমান পরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল, তিলের তেল
এবং অলিভ অয়েল ভালো মতো মিশিয়ে চুলে এবং স্ক্যাল্পে ভালো মতো লাগিয়ে গরম
তোয়ালে দিয়ে পেঁচিযে ৩০ মিনিট রাখুন। এরপর শ্যাম্পূ করে ফেলুন। এটি একটি
খুবই কার্যকর হেয়ার টনিক হিসেবে কাজ করে যা চুল এবং স্ক্যাল্পকে খুব ভালো
ভাবে কন্ডিশন্ড করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
টিপস
– যদি ক্যাস্টর অয়েল অন্য কোনো তেলের
সাথে না মিশিয়ে মাথায় লাগাতে চান, তবে খুব অল্প পরিমাণ তেল নিবেন এবং
শুধু স্ক্যাল্পে লাগবেন। কারণ ক্যাস্টর অয়েল খুব ঘন হওয়ায় এটি পুরো চুলে
লাগালে পরে উঠানো নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।
– রাতে ক্যাস্টর অয়েল মাথায় দিয়ে
ঘুমালে হেয়ার ক্যাপ অথবা তোয়ালে মাথায় পেঁচিযে নিন যাতে বালিশে দাগ না
লাগে অথবা বালিশে একটি কাপড় পেঁচিযে নিন।
– চোখের পাপড়ি ঘন করতে চাইলেও আপনি
ব্যবহার করতে পারেন ক্যাস্টর অয়েল। প্রতি রাতে ঘুমাবার আগে কটন বাড্স বা
তুলার সাহায্যে ব্রু বা পাপড়িতে লাগাবেন। সকালে ধুয়ে ফেলবেন। এক মাসের
মধ্যেই পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন