শীতের সময় রাতে বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি।
কারণ রাতে দীর্ঘ সময় ত্বক বিশ্রাম পায়, ফলে যে কোনো প্রসাধনী এবং
ময়েশ্চারাইজার ত্বক শুষে নিতে পারে।এছাড়াও এ মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি
পান করা জরুরি। এতে ত্বক ভিতর থেকে আর্দ্র থাকে।
ত্বকের পাশাপাশি চুলেরও বিশেষ যত্ন প্রয়োজন।
রাতে ঘুমানোর আগে চুলের গোড়ায় এবং পুরো
চুলে নারিকেল অথবা জলপাই তেল হালকা গরম করে মালিশ করতে হবে। এতে মাথার
ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। সারা রাত তেল রেখে সকালে শ্যাম্পু করে
ফেললেই চুল কোমল ও ঝলমলে থাকবে।
শীতে মাথায় খুশকির পরিমাণও বেড়ে যায়। তাই এ
সমস্যা দূর করতে তেলের সঙ্গে আমলকীর ও লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় মালিশ করলে
উপকার পাওয়া যাবে।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি শীতে
ত্বকের বাড়তি যত্নের জন্য কিছু মাস্কও ব্যবহার তরা উচিত। এক্ষেত্রে সব থেকে
উপকারী ফলের মাস্ক। ফল ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রেখে ত্বক উজ্জ্বল করে তুলতে
সাহায্য করে।
এই মৌসুমে ত্বকের জন্য উপকারী ফলের মাস্ক তৈরির পদ্ধতি –
আপেলের মাস্ক
রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এবং এর
অ্যাসট্রিনজেন্ট যা ত্বক আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। একটি আপেল ভাপে সিদ্ধ
করে নিতে হবে। এরপর সিদ্ধ আপেলটির খোসা ছারিয়ে চটকে নিয়ে এর সঙ্গে এক চামচ
মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। ত্বকে মিশ্রণটি লাগিয়ে ১০ মিনিট
অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ মাস্ক ত্বক নরম ও কোমল রাখতে সাহায্য করবে।
বেদানার তৈরি মাস্ক
শীতে বডি স্ক্রাব তৈরিতে বেদানা বেশ
উপযোগী। বেদানা ছাড়িয়ে ছেঁচে নিতে হবে। এর সঙ্গে দুই টেবিল-চামচ কাঠবাদামের
গুঁড়া এবং খানিকটা গুঁড়াদুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে সেটা ভেজা শরীরে হাত
ঘুরিয়ে মালিশ করতে হবে। কয়েক মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
অ্যাভাকাডো
রয়েছে ভিটামিন এ, ই ও ডি। আছে বিভিন্ন
খনিজ উপাদান এবং পটাশিয়াম। তাই ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত
ত্বক সুস্থ করতে এই ফল দারুণ উপকারী।ব্লেন্ডারে খানিকটা অ্যাভাকাডো দিয়ে এর
সঙ্গে বিশুদ্ধ ক্রিম এবং মধু মিশিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করতে হবে। মাস্কটি
ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই
মাস্ক ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে ত্বক কোমল রাখতে সাহায্য করবে।
স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরি থেঁতে নিয়ে দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে
নিতে হবে। মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
স্ট্রবেরি ত্বক উজ্জ্বল করার পাশাপাশি ভালো স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে, যা
ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।
কমলা
শীতে নিয়মিত কমলা খেলে তা রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পাশাপাশি ত্বকের জন্যেও কমলা বেশ উপযোগী।
টাটকা কমলার খোসা ত্বকে ঘষে নেওয়া যেতে পারে। অথবা খোসা শুকিয়ে গুঁড়া করে
সংরক্ষণ করলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। গুঁড়া করা খোসা দুধ ও মধুর সঙ্গে
মিশিয়ে মাস্ক ও স্ক্রাব তৈরি করা যায়।
পেঁপে
সুস্থ রাখতে পেঁপের জনপ্রিয়তা নতুন করে
বলার কিছু নেই। এছাড়াও ব্রণের সমস্যা সারিয়ে তুলতে এবং ত্বকের রংয়ের
অসামঞ্জস্যতা দূর করতে বেশ উপকারী এই ফল।
এই মাস্ক তৈরি করতে প্রয়োজন হবে চটকে
নেওয়া পাকাপেঁপে দুই চা-চামচ, এক চা-চামচ গ্লিসারিন এবং এক চা-চামচ গুঁড়া
দুধ। উপদানগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে সেটা মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে
২০ অপেক্ষা করতে হবে। হালকা শুকিয়ে গেলে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার
লাগিয়ে নিতে হবে।
কলা
ত্বকে আর্দ্রতা জুগিয়ে টানটান রাখতে সাহায্য করে কলা। তাছাড়া ত্বক পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে এই ফল।
একটি কলা ভালোভাবে চটকে নিয়ে এর সঙ্গে
খানিকটা মধু এবং গুঁড়া করা ওটস মিশিয়ে নিতে হবে। ১৫ মিনিট পর অল্প দুধ দিয়ে
মুখ ভিজিয়ে নিয়ে আলতোভাবে ঘষে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
যে কোনো মাস্ক ব্যবহারের পর তা ধুয়ে ত্বক হালকা ভেজা থাকতেই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। নতুবা ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন