নিয়ম করে আগের মতো সৌন্দর্যসেবা কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না এখন। তাই ত্বক ও চুলের যত্নে বাড়িতে দিতে হচ্ছে বাড়তি সময়। ত্বক ও চুলের যত্নে ঘরোয়া উপাদানের ব্যবহার অনেকেই করে থাকেন। তবে সঠিক ফল পেতে জেনে নিতে হবে সঠিক উপকরণ ব্যবহারের প্রয়োগ।
বাড়িতে রূপর্চচা করার সময় সঠিক উপকরণের ব্যবহার জরুরি। বলছিলেন হার্বস আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ শাহীনা আফরিন। এ–ও জানালেন, তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সব ধরনের ত্বক ও চুলের সঙ্গে মানিয়ে যাবে, এমন কিছু ঘরোয়া উপকরণ রয়েছে। সেসবের মিশ্রণে তৈরি প্যাক দিয়ে নেওয়া যাবে ত্বক ও চুলের যত্ন।
ত্বকের জন্য
মুখের ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটির বিকল্প খুব কমই আছে। এ জন্য ১ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, সঙ্গে তিন থেকে চার ফোঁটা লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ কাঁচা হলুদের রস, ১ টেবিল চামচ দুধ মিশিয়ে মুখের ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে ১ দিন লাগিয়ে ৮ থেকে ১০ মিনিট রাখুন। এরপর ভালো করে পানিতে ধুয়ে ফেলুন মুখ।
যাঁদের ব্রণের সমস্যা আছে, তাঁদের বেশ চিন্তায় পড়তে হয়। এর রয়েছে সহজ সমাধান। যেমন ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পরিমাণ দারুচিনি ও ৫টি লবঙ্গ ১ টেবিল চামচ পানিতে ভিজিয়ে গুঁড়া করে নিন। এরপর মিশ্রণটি লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। সপ্তাহে তিন দিন এই মিশ্রণের ব্যবহার ব্রণের দাগ দূর করবে।
এদিকে চলে আসছে ঈদুল আজহা। নিতে পারেন বাড়তি যত্ন। ত্বকে উজ্জ্বলতা আনতে ১ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ, আধা চা–চামচ ভিনেগার, ১ চা–চামচ চালের গুঁড়া ও ১ চা–চামচ ময়দা একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকের স্ক্র্যাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণ সপ্তাহে তিন দিন ৫ মিনিট মালিশ করলে ত্বকে দ্রুত উজ্জ্বলতা আসবে।
হাতের যত্নে
১টি পুরো বিট নিয়ে রস বের করতে হবে। এই রসের সঙ্গে ৬ টেবিল চামচ ময়দা মিশিয়ে নিন। এবার ১ চা–চামচ মধু আর লেবুর খোসা বাটা মিশিয়ে হাতের ত্বকে যতক্ষণ না শুকায় ততক্ষণ অপেক্ষা করুন। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করলেই চলবে।
পায়ের যত্নে
দুটি ডিমের কুসুমের সঙ্গে একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার ২ টেবিল টেবিল ডালের গুঁড়া মিশিয়ে ঘষে পা পরিষ্কার করে নিন। সপ্তাহে এক দিন কুসুম গরম পানিতে পা ধুয়ে নিলেই উজ্জ্বল হবে ত্বক।
গলার ত্বক
যাঁদের গলার ত্বক একটু গাঢ় রঙের তাঁরা এই মিশ্রণটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আধা কাপ লেবুর রসের সঙ্গে মসুর ডাল বাটা ও দুধ মিশিয়ে গলার ত্বকে মেখে ১০ মিনিট ঘষে নিন। এই প্যাকের ব্যবহার সপ্তাহে এক দিন করলেই যথেষ্ট।
চুলের যত্ন
চুল ধোয়ার জন্য এ সময়ে ব্যবহার করতে পারেন বৃষ্টির পানি। তবে সরাসরি বৃষ্টিতে ভিজে নয়, চুল ধোয়া নয়। কিছুক্ষণ বৃষ্টি হওয়ার পর সেই পানি কোনো পাত্রে ধরে রাখতে হবে, এরপর সেটি চুল ধোয়ার কাজে ব্যবহার করতে হবে। এবার দেখুন না কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে আপনার চুল।
এ ছাড়া অন্য একটি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন চুলের যত্নে। ২ টেবিল চামচ আমলকীর গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ মেথিগুঁড়া এবং ১ টেবিল চামচ মেহেদিগুঁড়া কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। এবার মাথার তালুতে এই মিশ্রণটি লাগিয়ে না শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। বাড়িতে শ্যাম্পু করার পর অনেকের চুলই তৈলাক্তভাব রয়ে যায়। এটা এড়াতে শ্যাম্পুর সঙ্গে একটু লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন।
এই সময় পরিচ্ছন্ন থাকাটাও জরুরি। নিয়মিত গোসল করার সময় গোসলের পানিতে নিমের পানি মিশিয়ে নিন। এ ছাড়া গোসলের পানিতে কয়েকটি গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিতে পারেন। এর সুগন্ধ এই মন খারাপের সময়ও আপনার মনকে রাখবে সতেজতায় ভরপুর।
কোন উপাদানের কী গুণ
মুলতানি মাটি
মুলতানি মাটি বা ফুলারস আর্থ, একধরনের মাটিজাতীয় রূপচর্চার উপকরণ। শুধু উজ্জ্বলতা বাড়াতেই নয়, ত্বকে জীবাণুনাশক (অ্যান্টিসেপটিক) হিসেবেও কাজ করে এই মুলতানি মাটি। তবে রূপচর্চার উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের আগে এই মুলতানি মাটি আসল কি না, তা জেনে নেওয়াটা খুব জরুরি। যদি পানিতে গোলানোর পর একটু ঘন হয়, তবে এটি আসল মুলতানি মাটি। আর যদি বালুর মতো হাতে কিছু অনুভূত হয়, তবে তা আসল নয়।
কাঁচা হলুদ
হলুদে আছে কারকিউমিন, যা জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া হলুদে আছে এসেনশিয়াল অয়েল, যে কারণে ত্বক হয় দ্রুত উজ্জ্বল।
আমলকীর গুঁড়া
আমলকীর গুঁড়ায় আছে ভিটামিন সি ও ডি, যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া আমলকীর ভিটামিন সি চুলে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বাড়াতে বেশ কাজে দেয়।
কাঁচা দুধ
কাঁচা দুধে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যে কারণে লোমকূপে জমে থাকা ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার হয়। এ ছাড়া ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়তা করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন