অনেকেই মনে করেন, মা হলেই বুঝি ওজন চলে যাবে বাড়তির দিকে। আর লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হলে নাকি মায়েরা মুটিয়ে যান। তবে এমন ধারণার আসলে কোনো ভিত্তি নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্তান জন্মের পর মা আবার তাঁর আগের ওজন ফিরে পেতে পারেন, যদি কিছু ব্যাপার খেয়াল রাখা হয়। শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য মাকে বেশি করে খেতে হবে এটি যেমন ঠিক, তেমনি আবার খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত খাওয়া না হয়। আবার মাকে স্বাভাবিক কাজকর্মও করতে হবে। আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হলে মা অতিরিক্ত মুটিয়ে যান, এ কথা একেবারেই ঠিক নয়।গর্ভকালীন সময়ে তাঁর ওজন ১৬ কেজি বেড়েছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পর থেকে তিনি বুকের দুধ খাওয়াতেন। আর এতেই তাঁর ১২ কেজি ওজন কমে যায় মাত্র তিন মাসের মধ্যেই। আর পরে বাকি ওজনটা কমতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। তিনি মনে করেন, মিষ্টি, পনির বা এ জাতীয় খাবারের পরিবর্তে লাউ বা অন্যান্য সবজি, কালিজিরা, দুধ, ডিম এবং ফলমূল খাওয়া ভালো। আর প্রচুর পানি পান করা উচিত। তিন-ছয় মাস পর হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম শুরু করা উচিত। সন্তানের যত্ন নিতে গিয়ে অনেকে তেমন সময় পান না, তেমন হলে সন্তানকে কোলে নিয়েই হাঁটা উচিত। হালকা কিছু ব্যায়াম তিনিও করেছেন, তবে যাঁদের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হয়, ব্যায়াম শুরু করার আগে তাঁদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফেরদৌসী ইসলাম। তিনি বলেন, শিশুর জন্মের পর থেকে অবশ্যই তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এতে যে শুধু শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে তা-ই নয়, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে মায়ের শরীরের অতিরিক্ত ওজনও কমে যাবে।
জেনে নেওয়া যাক ফেরদৌসী ইসলামের কিছু পরামর্শ
শিশুর জন্মের পর থেকে প্রথম ছয় মাস শিশুকে শুধু মায়ের দুধই খেতে দিন। এতে মায়ের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমে যাবে। গর্ভধারণের আগে যাঁদের ওজন স্বাভাবিক ছিল, তাঁরা শুধু বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমেই আগের ওজনে ফিরে আসতে পারেন
ভাত, মিষ্টিসহ শর্করাজাতীয় অন্যান্য খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে যাঁরা গর্ভধারণের আগে থেকেই একটু মুটিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
ফলমূল, শাকসবজি এবং আমিষজাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যাঁদের শিশুর জন্ম হয়েছে, তাঁরা শিশুর জন্মের ছয় সপ্তাহ পর থেকে ব্যায়াম শুরু করতে পারেন। ছয় সপ্তাহের আগে পেটের ব্যায়ামগুলো কোনো অবস্থাতেই করা যাবে না।
শিশুর জন্ম অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেই হোক আর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়ই হোক, মায়ের পক্ষে যখনই স্বাভাবিক কাজকর্ম করা সম্ভব হবে, তখন থেকেই সেসব কাজ শুরু করতে হবে। তবে ভারী কাজ করা যাবে না। আবার অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঘরে শুয়ে থাকেন অনেকে, যেটি একেবারেই ঠিক নয়।
এ প্রসঙ্গে আরও পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নূর সাঈদা।
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর ওজন অন্তত ১০-১২ কেজি বৃদ্ধি পায় এবং এটিই স্বাভাবিক। তবে শিশু জন্মের পরপরই পুরো ওজনটা একবারে কমে যায় না। একটু নিয়মের মধ্যে থাকলে সাধারণত ছয় সপ্তাহের মধ্যেই তিনি আবার আগের ওজনে ফিরে আসেন।
শর্করাজাতীয় খাবার অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। তেমনি আবার এটাও খেয়াল রাখতে হবে, বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন যে মা, তিনি যেন পুষ্টিবঞ্চিত হয়ে না পড়েন। তাই এগুলো খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে।
মা প্রতিদিন দুই গ্লাস দুধ ও একটি ডিম খেতে পারেন। একবেলা খাবারের সময় তাঁকে একটু বেশি ভাত খেতে হবে। আর অল্প অল্প করে বার বার খাবার অভ্যাস করতে হবে।
স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যাঁদের সন্তানের জন্ম হয়েছে, তাঁরা দুই সপ্তাহ পর থেকে কিছু হালকা ব্যায়াম (পেরিনিয়াল এক্সারসাইজ) করতে পারেন।
মা হওয়ার পর ব্যায়াম করা প্রসঙ্গে পরামর্শ দিয়েছেন পারসোনা হেলথের প্রধান প্রশিক্ষক ফারজানা খানম। জেনে নিন তাঁর পরামর্শ।
স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যাঁদের শিশুর জন্ম হয়েছে
শিশুর জন্মের তিন মাস পর থেকেই তাঁরা সব ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন। তবে ব্যায়ামের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ানো উচিত।
তিন মাসের পর থেকে বাইরে হাঁটাহাঁটি করা উচিত। এর পাশাপাশি কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজও করতে পারেন। এগুলোর মধ্যে আছে পুশ আপ, ফিট আপসহ অন্যান্য ব্যায়াম।
আর ব্যায়ামাগারে গিয়ে ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে ট্রেডমিল বা অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থার সাহায্যে ওজন কমানো যেতে পারে। কিছুদিন এসব ব্যায়াম করার পরে তাঁদের এসবের পাশাপাশি টোনিং এক্সারসাইজও করা উচিত। আর তাঁকে সপ্তাহে কতটা সময় ব্যায়াম করতে হবে, তা প্রয়োজন অনুসারে প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক বলে দেবেন।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যাঁদের শিশুর জন্ম হয়েছে
শিশুর জন্মের তিন মাস পর থেকে দিনে ৪৫ মিনিট করে হাঁটাহাঁটি করা ভালো। চাইলে কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়ামও করতে পারেন।
ছয় মাস পর থেকে অন্যান্য ব্যায়াম শুরু করা ভালো। তবে হালকা ব্যায়াম দিয়েই শুরু করা উচিত।
পেটের ব্যায়ামগুলো আট-নয় মাস পর শুরু করা ভালো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন