আমাদের
দেশে টক জাতীয় কিছু ফলের মধ্যে কামরাঙ্গা অন্যতম। এই ফলে আছে পটাশিয়াম,
ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, সুগার (কম পরিমাণে) সোডিয়াম, এসিড
ইত্যাদি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Carambola, এবং এই ফলটি বিশেষ করে ফিলিপাইন,
ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা অঞ্চলের একধরণের
স্থানীয় প্রজাতির উদ্ভিদের ফল ও এই ফল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া,
দক্ষিণ-প্রশান্ত এবং পূর্ব-এশিয়া অংশে খুব জনপ্রিয়।
কিন্তু
কামরাঙ্গাতে আছে এমন একটি উপাদান যা মানবদেহের মস্তিষ্কের জন্য বিষ।
সাধারণ মানুষেরা কামরাঙ্গা খেলে, কিডনি তা শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু
কিডনি রোগীর দুর্বল কিডনি শরীর থেকে এই বিষ বের করে দিতে সক্ষম নয়। এর ফলে
তা রক্ত থেকে আস্তে আস্তে দেহের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এবং বিষক্রিয়াও ঘটাতে
পারে।
এই সমস্যার লক্ষণগুলো হল-
১। ক্রমাগত হেঁচকি দেয়া
২। দেহ দুর্বল হয়ে যাওয়া
৩। মাথা ঘোরানো
৪। বমি বমি ভাব
৫। মাথা কাজ না করা
৬। দেহে মৃগী রোগীর মত কাঁপুনি উঠা
৭। কোমায় চলে যাওয়া ও শেষ পর্যন্ত মৃত্যু
কামরাঙ্গা খাওয়ার পর কিডনী রোগীর মধ্যে এই ধরণের লক্ষন গুলো দেখা দিলে দ্রুত তার hemodialysis এর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বহুবছর
আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা জানতেন যে, কামরাঙ্গাতে এমন একটি উপাদান আছে যা
কিডনি রোগীর জন্য খুব ক্ষতিকর। কিন্তু কোন বিজ্ঞানীই এই ক্ষতিকর উপাদানটি
বের করতে পারেননি। সম্প্রতি University of Sao Paulo (Brazil) এর একদল
বিজ্ঞানী এই ক্ষতিকর উপাদানটি বের করতে সক্ষম হয়েছেন। বিজ্ঞানীরা
কামরাঙ্গার এই ক্ষতিকর উপদানটির না দিয়েছেন caramboxin, ও কামরাঙ্গার
বৈজ্ঞানিক নাম Carambola হতেই এই ক্ষতিকর উপাদানটির নামকরণ করা হয়েছে।
শুধু যে অপকারিতা আছে টা নয় । এবার জেনে নিন এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কেঃ
প্রতি
একশ গ্রাম কামরাঙ্গায় শক্তি মেলে ৩১ কিলোক্যালরি। শর্করা ৬.৭৩ গ্রাম, চিনি
৩.৯৮ গ্রাম, খাদ্য ফাইবার ২.৮ গ্রাম, স্নেহ ০.৩৩ গ্রাম, প্রোটিন ১.০৪
গ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) ০.৩৯ মিলিগ্রাম, ফোলেট (বি৯) ১২ μg,
ভিটামিন সি ৩৪.৪ মিলিগ্রাম ছাড়াও কামরাঙ্গায় পাওয়া যাবে ভিটামিন এ, ফসফরাস,
পটাশিয়াম ও দস্তা।
ওষুধি গুণ
কামরাঙ্গার
ঔষধিগুণও বিস্ময়কর। সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য তালিকায় কামরাঙ্গা রাখতে
পারেন প্রতিদিন। তার আগে জেনে নিন কামরাঙ্গার ঔষধিগুণ
অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
কামরাঙ্গা
রুচি ও হজমশক্তি বাড়ায়। পেটের ব্যথায় কামরাঙ্গা খুব উপকারী। কামরাঙ্গায়
আছে এলজিক এসিড। এটি অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
রক্ত পরিষ্কারক
কামরাঙ্গা রক্ত পরিশোধন করে। কামরাঙ্গার পাতা ও কচি ফলে আছে ট্যানিন, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
সর্দিকাশিতে উপকারী
কামরাঙ্গা
পুড়িয়ে ভর্তা করে খেলে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। দীর্ঘদিনের
জমাট সর্দি বের করে দিয়ে কাশি উপশম করে। শুকনো কামরাঙ্গা জ্বরের জন্য খুব
উপকারী।
কৃমিনাশক
কামরাঙ্গা
পাতা ও ডগার গুঁড়া খেলে জলবসন্ত ও বক্রকৃমি নিরাময় হয়। কৃমির সমস্যা
সমাধানে কামরাঙ্গা ফলও উপকারী। কামরাঙ্গার রসের সঙ্গে নিমপাতা মিশিয়ে খেলে
কৃমি দূর হয়।
অর্শ রোগে উপকারী
দুই
গ্রাম পরিমাণ শুকনো কামরাঙ্গার গুঁড়া পানির সঙ্গে রোজ একবার করে খেলে
অর্শ রোগে উপকার পাওয়া যায়। আর বাতের ব্যথায়ও কামরাঙ্গা বেশ উপকারী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন