প্রথম পদ্ধতি
প্রথম পদ্ধতি হলো ম্যাসাজ করা। নিয়মিত
ম্যাসাজ করতে হবে। এতে করে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং স্ক্যাল্প
উদ্দীপিত হবে। এক টেবিল চামচ ভিটামিন ই নিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করতে থাকুন।
ভিটামিন ই চুলের জন্য প্রয়োজনীয় নিউট্রিশন এর যোগান দেয়। ভিটামিন ই এর
সাথে চা এর নির্যাস যোগ করতে পারেন। এই দুটো ভালো ভাবে মিশিয়ে হাতের তালু
এবং আঙ্গুলের সাহায্যে পুরো মাথার চুলের গোড়ায় গোড়ায় লাগিয়ে নিন। ৫-৬
মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিন। চুলগুলোকে
ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে সম্পূর্ণ চুল আঁচড়ে নিন।
কিছুক্ষণ পর সাধারণ ভাবে শ্যাম্পু এবং
কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। চুল গজানোর জন্য দিনে ৩ বার ম্যাসাজ করতে হবে এই
নিয়মে। কিন্তু বারবার শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। এতে চুলের ক্ষতি হবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি
চুলের গোঁড়ায় হেয়ার ফলিকল থাকে।
ভাইব্রেশনের মাধ্যমে যদি ফলিকল উদ্দীপিত করা যায় তবে নতুন চুল গজানো
সম্ভব। বাজারে ভাইব্রেটিং ম্যাসেজার কিনতে পাওয়া যায়। এর সাহায্যে আপনি
স্ক্যাল্পে চক্রাকারে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাথায় ভাইব্রেটিং ম্যাসাজ নিতে
পারেন। যে জায়গায় বেশি চুল পড়ে যাচ্ছে, তাতে বেশি মনোযোগ দিন। এভাবে ৫
থেকে ১০ মিনিট আপনার স্ক্যাল্প ভাইব্রেট করুন।
ভালো ফল পেতে এটাও আপনাকে দিনে ৩ বার করতে হবে।
তৃতীয় পদ্ধতি
এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে যেটা আপনার
স্ক্যাল্পের মৃত কোষগুলো ঝরে যেতে সাহায্য করবে। এই মৃত কোষগুলো
স্ক্যাল্পের ফলিকল ব্লক করে রাখে, যে কারণে নতুন চুল গজাতে পারে না। কেননা
তখন স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। অল্প পরিমাণ শ্যাম্পু নিয়ে মাথায়
ম্যাসাজ়ের মত করে লাগিয়ে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
এটা দিনে একবার করতে হবে।
চতুর্থ পদ্ধতি
এই পদ্ধতি হল মেডিকেশন। চুলের জন্য ওষুধ।
অনেক গবেষণার পর ফেনাস্টেরাইড আর মিনোক্সিডিল নামের দুটো ওষুধ চুল গজানোর
জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। দুটি ওষুধের-ই সাইড ইফেক্ট আছে। মিনোক্সিডিল এর
দুইটা কনসেনট্রেশন পাওয়া যায়। ২% আর ৫%। ২% মিনোক্সিডিল মেয়েদের জন্য আর
৫% মিনোক্সিডিল ছেলেদের জন্য। এটা বাজারে জেনোগ্রো নামে পাওয়া যায়।
স্প্রে করে মাথার স্ক্যাল্পে দিতে হয়।
এই পদ্ধতি ছাড়াও আপনাকে খাদ্যাভ্যাস আর কিছু সাধারণ যত্ন নিতে হবে।
খাদ্যাভ্যাস
০১. প্রোটিন
পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
গ্রহণ করুন – আমাদের চুল মূলত কেরাটিন দিয়ে গঠিত। এটি অ্যামিনো এসিড দিয়ে
তৈরি এক ধরণের প্রোটিন। তাই নতুন চুল গজানোর জন্যে অবশ্যই আপনার শরীরকে
পর্যাপ্ত অ্যামিনো এসিড সরবরাহ করতে হবে। মাছ, মাংস, পনির, দুধ, ডিম –
আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিনই এগুলোর অন্তত একটি রাখার চেষ্টা করুন।
সয়াবিন, মটরশুঁটি, কলা, বাদাম ইত্যাদি থেকেও পেতে পারেন। তবে
নন-ভেজিটেরিয়ান খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।
০২. আয়রন আর জিঙ্ক
আয়রন আর জিঙ্ক আপনার মাথার কোষে অক্সিজেন
পরিবহন করে নিতে সহায়তা করবে আর নতুন টিস্যু তৈরিতে এবং ক্ষয়রোধে
সহায়তা করবে। পরিমিত পরিমাণে আয়রন আর জিঙ্ক নতুন এবং দ্রুত চুল গজানোর
জন্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মটরশুঁটি, বাদাম, কলিজা, মাংস, দুধে আপনার
প্রয়োজনীয় জিংক আর আয়রন বিদ্যমান।
০৩. ভিটামিন সি
পেয়ারা, লেবু, কমলা, আনারস, কামরাঙা, কাঁচা মরিচে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। আপনার চুলের বৃদ্ধি এবং গজানোর জন্য সহায়ক।
০৪. কালোজিরা
কালোজিরা নতুন চুল গজানোর জন্যে সহায়ক। মাথায় কালোজিরার তেল ব্যবহার করা আর খাবারে কালোজিরা ব্যবহার খুব ভালো ফল দেয়।
কিছু সাধারণ যত্ন
০১. নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখা এবং আঁচড়ানো। কিন্তু অতিরিক্ত আঁচড়ানো চুল পড়া বাড়িয়ে দেয়।
০২. পেঁয়াজ এর রস চুলের গোড়ায় গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখুন | নিয়মিত ব্যবহার করলে নতুন চুল গজাবে।
০৩. মেহেদি পাতা কিছু দিন ঘন ঘন ব্যবহার করুন। পাতা বেটে লাগিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
০৪. শুকনা আমলকি পানিতে ভিজিয়ে লাগাতে পারেন।
০৫. খাটি কালো জিরা তেল বা নির্যাস বেশি বেশি ব্যবহার করতে পারেন।
কথায় বলে যতনে রতন মেলে। নিয়মিত যত্ন নিন, পদ্ধতিগুলো মেনে চলুন। দেখবেন আপনার মাথায় নতুন চুল গজাতে শুরু করেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন