১. আটা
ক. রান্না ঘরের আটা আপনার ত্বক পরিচর্যায়
অনেক সহায়ক হতে পারে। যেধরনেরই ত্বক হোক না কেন, আটা সব ত্বকের জন্যেই ভালো
কাজ করে। ১ টেবিলচামচ পরিষ্কার আটা নিয়ে তার সাথে গরুর কাঁচা দুধ, একটু
কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়েমুখে মেখে ১০/১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলবেন।
খ. আটা পানিতে ফুটিয়ে পেস্টের মতো করে মুখমন্ডলে লাগালে মুখের ছিটছিট তিলে দাগ অনেক হালকা হয়ে যায়।
গ. বেসনের মতো আটা হাতে নিয়ে পানি দিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগিয়েসাবানের মতো মুখ পরিষ্কার করা যায়।
ঘ.দুধের সরের সাথে আটা ও কাঁচা হলুদ মিশিয়ে মুখে মেখে ১৫ মিনিট রেখেধুয়ে ফেলবেন।
২. হলুদ
হলুদের গুণের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে
না। রূপচর্চায় হলুদের ভূমিকাঅনেক। অতীতে নানী-দাদীরাও হলুদ ব্যবহার করতেন।
নানান রোগের জন্যে কাঁচাহলুদের রসও খেতেন। ঘরোয়া চিকিৎসাতেও হলুদের অবদান
অনেক।
অনেক ফেসপ্যাক কাঁচা হলুদ দিয়ে তৈরি করা
হয়। অনেকের গায়ের রং ফ্যাকাসেসাদা। তারা যদি একটু কাঁচা হলুদ বেটে তার সাথে
অলিভ অয়েল মিশিয়ে গায়ে, হাতে এবং পায়ে মেখে প্রতিদিন গোসল করেন, তাহলে
দেখবেন ফ্যাকাসে ভাবনেই। সুন্দর সোনা বর্ণের আভা চলে আসছে দেহে। কাঁচা
হলুদের সাথে দুধের সরওমিশিয়ে নিতে পারেন।
হলুদ লোমনাশক, নিয়মিত মাখলে শরীরের লোম
বাড়ে না। এতে ওয়াক্সিং-এর কাজহয় ভালো। আগেকার দিনে মা-দাদীরা কাঁচা হলুদ
বাটার সাথে নিম পাতা বেটে বড়িবানিয়ে রোদে শুকিয়ে রাখতেন। তারপর প্রতিদিন
বাসি পেটে খেতেন। এতে পেটেরদোষ হতো না, লিভার ভালো থাকতো। এতে মুখে লিভার
স্পট পড়ে না। অনেকমেয়েলি অসুখেও ফল পাওয়া যায়। কাঁচা হলুদ আখের গুড়ের সাথে
খালি পেটেখেলে রক্ত পরিশোধিত হয় বলে স্বাস্থ্য রক্ষা ও রূপচর্চায় হলুদের
দান অতুলনীয়।
৩. ডাব
ক.ডাবের পানিতে ১৯টি খনিজ উপাদান রয়েছে। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে দুটোডাব খেলে ত্বকের কমনীয়তা বাড়ে।
খ.বসন্ত হলে কচি ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুলে দাগ চলে যায়।
গ. মুখে ব্রণের দাগ হলে ডাবের পানি দিয়ে ধুলে দাগ চলে যায়।
ঘ.একটু তুলো ডাবের পানিতে ভিজিয়ে মুখে
লাগিয়ে শুকোতে দিন। তারপরহাত দিয়ে আস্তে আস্তে মুখ ঘষে দেবেন। এতে মুখে
সুন্দর উজ্জ্বল একটা ভাব চলেআসবে। মুখের ত্বক কোমল ও মসৃণ হবে।
নানী-দাদীরা সেকালে নারকেল দিয়ে চুল
ধুতেন। এতে চুলের উজ্জ্বলতা যেমনবাড়তো তেমনি চুলও পড়তো না। অনেক সময় ঝুনো
নারকেল নষ্ট হয়ে যায়। এইনষ্ট নারকেল না ফেলে শিলে পিষে মাথায় ঘষে দিয়ে
ঘণ্টা খানেক পরে মাথা ধুলে চুলশুকোনোর পর দেখবেন চুল তেল দেয়ার মতো হয়েছে।
চুলের পরিচর্যায় নারকেলবেশ উপকারী।
ঙ.একটা নারকেলের অর্ধেক নিয়ে কুড়িয়ে আধা
কাপ অথবা এক কাপ গরমপানির সাথে ভালো করে চটকে দুধ বের করে নিয়ে পরিষ্কার
দুধের সাথে একটাকাগজী লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় বিলি কেটে চামড়ায় ভালো ভাবে
ম্যাসাজ করে২০-৩০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানিতে চুল ধুয়ে নিন। এ পদ্ধতি
সপ্তাহে একদিনকরলে চুল ওঠা বন্ধ হবে। তারপরেও চুল উঠলে ভিটামিন ও আয়রন খেতে
হবে।ক্যালসিয়ামের অভাবেও চুল ওঠে। সেজন্যে ডাক্তারের পরামর্শে ক্যালসিয়াম
খেতেপারেন।
৪. গোলাপ জল
গোলাপ জল চেনে না এমন লোক বোধ হয় খুঁজে
পাওয়া যাবে না। বিয়ে বাড়ি বলুন, মিলাদ মাহফিল বলুন, রূপচর্চা বলুন- গোলাপ
জলের চাহিদা আছেই। রান্না-বান্নায়গোলাপ জল তো চাই-ই চাই। গোলাপ ফুলের
নির্যাস থেকেই এ পানি বানানো হয়।পানি সুগন্ধি করতে গোলাপ জলের দরকার হয়।
গ্লিসারিনের সাথে সমপরিমাণগোলাপ জল মিশিয়ে ঠোঁটে মাখলে ঠোঁট ফাটে না এবং
ঠোঁটের রং-ও সুন্দর হয়।গোলাপ জল দিয়ে স্কিন-ফ্রেশনার টনিক আপনি নিজেই
বানাতে পারেন। আধা কাপগোলাপ জল, একটা লেবুর রস, ক-ফোঁটা মধু একত্রে মিশিয়ে
নিলে স্কিন-ফ্রেশনারটনিক হয়ে গেল।
এ টনিক দিনে দুবার তুলোয় করে মুখে লাগাতে
পারেন। যাদেরমুখের চামড়া খসখসে তারা রাতে মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে সমপরিমাণ
গোলাপ জলেরসাথে গ্লিসারিন মুখে, হাতে এবং পায়ে মেখে নিতে পারেন। ভোরে কুসুম
গরম পানিদিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলবেন। এতে মুখের খসখসে ভাব থাকবে না এবং ত্বক
কোমলহবে।
৫. মধু
মধুর গুণের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে
না। মধু এবং দুধকে বলা হয়বেহেশতের নিয়ামত। মধু ত্বকের জন্যে খুবই উপকারী।
বহু ফেসপ্যাক মধু দিয়েতৈরি হয়। কয়েক ফোঁটা মধু ও কাঁচা দুধ একত্রে মুখে
মাখলে মুখের রং উজ্জ্বল, কোমল ও মসৃণ হয়।
মধু ও বেসন একত্রে মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে
মুখে মেখে ১৫/২০ মিনিট রেখেহালকা গরম পানি ও পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুলে
মুখের ত্বক খুব সুন্দর ও মসৃণ হয়।
কয়েক ফোঁটা মধু + কয়েক ফোঁটা লেবুর রস + ১
চা চামচ গাজরের রস + ১ চাচামচ ছোলার ডালের বেসন একত্রে পেস্টের মতো করে
মুখে মেখে ২০/৩০ মিনিটরেখে স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মুখ
মসৃণ ও কোমল হয়ে উঠবে।এ প্যাকটি শুষ্ক ও স্বাভাবিক ত্বকের জন্যে উপকারী।
মধু খেলেও নানা রোগের হাত থেকে রেহাই
পাওয়া যায়। মধু কফনাশক। প্রতিদিন১ চামচ মধু খেলে ঠান্ডা লাগতে পারে না।
আয়ুর্বেদী বহু চিকিৎসায় মধু ব্যবহৃত হয়।বাসক পাতার রসের সাথে কয়েক ফোঁটা
মধু নিয়মিত খেলে ঘুম ভালো হয়।
৬. খাবার সোডা
খাবার সোডা রুটি, বিস্কুট, চটপটি ইত্যাদি
বহুবিধ রান্নায় ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তুরূপচর্চা বা কোনো কিছু পরিষ্কার
করার কাজেও যে সেটি ব্যবহার হয় তা হয়তোঅনেকেই জানেন না। রূপোর গয়না একটু
খাবার সোডা দিয়ে ব্রাশ করে ধুলেদেখবেন ঝকঝকে হয়ে উঠছে। অনেকের মুখের দাঁত
দেখতে হলদেটে ভাব। তারাযদি একটু খাবার সোডা দাঁত মাজার ব্রাশের ওপর নিয়ে
মেজে নেন, তাহলে দেখবেনদাঁতগুলো মুক্তোর মতো ঝকঝকে হয়ে উঠেছে। তবে, এ
পদ্ধতিটি আপনি রোজকরতে যাবেন না। এতে মাঢ়ির ক্ষতি হবে।
৭. আলু
শুধু রান্না-বান্না, খাবার-দাবারে যে আলুর
ব্যবহার হয় তা নয়। রূপচর্চায় আলুরঅবদান একেবারে কম নয়। অনেকে গায়ের রং
ফর্সা করার জন্যে নানান জিনিসব্যবহার করে থাকেন। তারা হয়তো অনেকেই জানেন না
আলু ব্যবহার করেওশরীরের রং উজ্জ্বল করা যায়। গোল আলু খোসাসহ গোল গোল করে
কেটে নিয়েকিছুক্ষণ ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর পানি থেকে তুলে হাতে
পায়ে মুখেগলায় ঘষে ঘষে মেখে নিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত
করলেদেখবেন গায়ের রং উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
৮. ডিম
সৌন্দর্য চর্চায় ডিম এক অতুলনীয় ভূমিকা
পালন করে। ডিম দিয়ে মাথা ধোয়া,ডিমের তৈরি প্যাক বিভিন্নভাবে ত্বকের জন্যে
ব্যবহার হয়ে থাকে। ডিমের প্যাকেমুখের লাবণ্য ফিরে আসে। ডিমের কুসুমের প্যাক
শুকনো ত্বকের পক্ষে খুবই ভালো।শুকনো ত্বকের জন্যে ডিমের কয়েকটি প্যাক :
ক.ডিমের হলুদ অংশ + আধা চা চামচ অলিভ অয়েল
+ কয়েক ফোঁটা লেবুররস। এ প্যাকটি মুখ ধুয়ে, পরিষ্কার মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে
২০ মিনিট পরে প্রথমেহালকা কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ও পরে ঠান্ডা পানি
দিয়ে ধুয়ে নিলে ত্বকেরজন্যে খুবই ভালো ফল হবে।
খ.ডিমের কুসুম ও তার সাথে অ্যালমন্ড অয়েল
অথবা অলিভ অয়েল আধাচা চামচ মিশিয়ে মুখে মেখে ১৫ মিনিট রেখে প্রথমে হালকা
কুসুম গরম পানি, পরেঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। সাধারণত সপ্তাহে ২/৩
দিনের বেশি লাগানোরদরকার নেই। এতে আপনার ত্বক সতেজ হয়ে উঠবে।
৯. ময়দা
প্রত্যেক বাড়িতেই রান্না ঘরে ময়দা পাওয়া
যায়। আর এ ময়দা রূপ চর্চার কাজেব্যবহার করে আপনি হতে পারেন রূপবতী নারী।
সাবানের পরিবর্তে ময়দা পানিতেগুলিয়ে হাতে, পায়ে ও মুখে মেখে গোসল করতে
পারেন। আবার ময়দা + কাঁচা হলুদবাটা + দুধের সর মিশিয়ে হাতে, পায়ে, মুখে
আস্তে আস্তে মেখে প্রথমে হালকা কুসুমগরম পানিতে, পরে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে
নিলে দেখবেন গায়ের রং কিছু দিনের মধ্যেউজ্জ্বল হয়ে উঠছে।
১০. পেঁয়াজ
রূপচর্চায় পেঁয়াজের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
বহু রোগ সারাতেও পেঁয়াজের জুড়িনেই। কাঁচা পেঁয়াজে ভিটামিন-বি ও ভিটামিন-সি
রয়েছে। কাঁচা পেঁয়াজের রস ওআদার রস সমপরিমাণে নিয়ে সামান্য গরম করে ১ বা ২
চা চামচ খেলে নতুন সর্দিরউপশম হয়। যদি কারো নাক থেকে অনবরত পাতলা পানির মতো
শ্লেষ্মা পড়েতাহলে কাঁচা পেঁয়াজ ও আদা সামান্য তেলে ভেজে নিয়ে খেলে
শ্লেষ্মা ঘন হয়।মাথার খুশকিতে কাঁচা পেঁয়াজের রস ওষধি হিসেবে কাজ করে।
তাছাড়া কাঁচাপেঁয়াজের সাথে সামান্য কয়েকটি সর্ষে বেটে মাথায় বিলি কেটে দিলে
নতুন চুলগজায়।
১১. শসা
শসার গুণের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। শসা যেমন রান্না-বান্নায়, খাওয়া-দাওয়ায় ব্যবহৃত হয় তেমনি ব্যবহৃত হয় রূপচর্চায়।
ক.মুখে কোনো কালো দাগ পড়লে কচি শসার রস
মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিটরেখে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নেবেন। এভাবে কিছুদিন নিয়মিত
লাগালে দাগ উঠে যায়।
খ.শসার রসের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস
মুখে মেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডাপানিতে ধুয়ে নিলে মুখের রং উজ্জ্বল ও কোমল হয়।
তবে নিয়মিত কিছুদিন করতেহবে।
গঅনেক সময় দেখা যায় চোখের নিচে অনেকেরই কালো দাগ পড়ে। শসাররস নিয়মিত মাখলে এ দাগ দূর হবে।
ঘ.মনে রাখবেন যদি কেউ ফর্সা হতে চান তবে
নিয়মিত শসার রসের সাথেকয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে, হাতে ও গায়ে নিয়মিত
মাখলে গায়ের রংফর্সা হয় অথবা শসা পাতলা পাতলা করে কেটে মুখে ঘসে নিতে
পারেন। পরেশুকোলে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নেবেন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্যে শসা খুবই
উপকারী।তবে কাঁচা ব্রণের ওপর লেবুর রস লাগালে দাগ হয়। তার জন্যে শুধু শসার
রসইভালো।
ঙ.মুখকে রোদ থেকে বাঁচাতে, মুখের দাগ
তুলতে ও ময়লা থেকে যদি রেহাইপেতে চান তবে শসার সাহায্যে একটি ফেসপ্যাক
বানিয়ে ২৫/৩০ মিনিট রেখেপ্রথমে গরম পানি, পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিয়ে
আপনি নিশ্চিন্তে বাইরে বেড়িয়েআসতে পারেন। এতে ত্বক সারাদিনের জন্যে যেমন
চকচকে, মসৃণ ও কোমলথাকবে তেমনি বাইরের নানান জীবাণু থেকে ত্বক রেহাই পাবে।
এবার জেনে নিন কীভাবে প্যাকটি তৈরি করবেন।
একটি কচি শসা পাতলা করেকেটে থেঁতো করে তার সাথে একটি ডিমের কাঁচা কুসুম,
এক টেবিল চামচ গুঁড়ো দুধমিশিয়ে মিক্সার মেশিন অথবা ব্লেন্ডারে মিশিয়ে নিয়ে
মুখে, গলায় ও হাতে মেখেনেবেন। ব্লেন্ডার না থাকলে হাতেই ভালো করে মিশিয়ে
নেবেন।
১২. গাজর
রূপচর্চায় গাজরের এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
গাজরে প্রচুর ভিটামিন-এ এবংক্যারোটিন রয়েছে। প্রতিদিন একটি করে কাঁচা গাজর
খেলে আপনার শরীরেভিটামিন-এ-এর অভাব হবে না। এতে চোখ, ত্বক- উভয়ের জন্যেই
উপকার।আমাদের দেশে শীতকালে প্রচুর গাজর পাওয়া যায় এবং দামও খুব কম থাকে।
তাইসস্তায় আপনি প্রচুর ভিটামিন গ্রহণ করতে পারেন। গাজর খেলে দাঁতও চকচকেহয়।
গায়ের রং ফর্সা হয়। পায়খানা পরিষ্কার হয়। চুল পড়ে না।
চুলের উজ্জ্বলতাবাড়ে। মনে রাখবেন,
ভিটামিন-এ ত্বকের সৌন্দর্যের জন্যে খুবই দরকার আর তাআপনি গাজর থেকে অল্পতেই
পেতে পারেন। অর্থাৎ গাজর খেলে আপনার ত্বক চোখদাঁত ঠোঁট চুল- সব কটি
অঙ্গেরই উপকার হচ্ছে। আবার গাজর দিয়ে সুন্দরফেসপ্যাকও তৈরি করে নিতে পারেন।
এ প্যাক মিশ্র ত্বকের পক্ষে খুবই উপকারী।কীভাবে প্যাক তৈরি করবেন জেনে নিন
:
১ টেবিল চামচ অথবা আপনার পরিমাণ মতো ছোলার
ডালের বেসন + গাজরের রস+ অলিভ অয়েল কয়েক ফোঁটা নিয়ে পেস্টের মতো বানিয়ে
মুখে মেখে ১৫/২০মিনিট রেখে প্রথমে হালকা গরম পানিতে, পরে ঠান্ডা পানিতে
ধুয়ে ফেলবেন। গাজরদিয়ে আপনি আরও একটি ফেসপ্যাক তৈরি করে নিতে পারেন। এ
প্যাক স্বাভাবিকও শুষ্ক- উভয় ত্বকের জন্যেই উপকারী।
১টি (মিহি কোড়ানো) গাজর + ২ চা চামচ গরুর
দুধ + ১ চা চামচ বেসন মিশিয়েমুখে মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
কাঁচা গাজর নিয়মিত খেলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
১৩. টমেটো
শীতকালে আমাদের দেশে প্রচুর টমেটো পাওয়া
যায়। এ সময় দামও কম থাকে।টমেটোতে প্রচুর ভিটামিন-সি থাকে। তাই কাঁচা টমেটো
খাওয়া খুবই উপকারী।টমেটোতে ভিটামিন-বিও রয়েছে। ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি
এগুলো ত্বকের জন্যেবেশ উপকারী। টমেটো খেয়ে এবং ফেসপ্যাক তৈরি করে আপনি
রূপচর্চা করতেপারেন অনায়াসে।
ফেসপ্যাক তৈরির পদ্ধতি
মাঝারি ধরনের গোটা তিনেক টমেটোর রসের
সঙ্গে ২ চা চামচ গ্লিসারিন, ৩ চামচলেবুর রস, ৪ চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে ভালো
করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে, গলায় ও হাতে ভালো করে মেখে নিয়ে ১৫/২০
মিনিট রেখে ঠান্ডা পানিতে ধুয়েফেলুন। দেখবেন মুখটি কেমন সুন্দর মনে হচ্ছে।
১৪. বাঁধাকপি
বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন-বি, ভিটামিন-এ ও
ভিটামিন-সি। এছাড়া বাঁধাকপিতেভিটামিন-কে-ও রয়েছে। ভিটামিন-কে রক্ত জমাট
বাঁধতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।দেহের হাড় গঠন ও পুষ্টিতে ভিটামিন-কে বিশেষ
প্রয়োজন। বাঁধাকপিতে সালফাররয়েছে প্রচুর। সালফার আমাদের চুল ও দেহের
স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষাকরে।
বাঁধাকপির সাহায্যে আমরা মুখের ত্বককে
অনায়াসে কোমল করে তুলতে পারি।প্রথমে বাঁধাকপির পরিষ্কার দু-তিনটি পাতা নিয়ে
রস বের করুন। এবার এর সঙ্গে ১চামচের চার ভাগের ১ ভাগ ইস্ট মেশান এবং এর
সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে ঘনপেস্টের মতো তৈরি করে নিয়ে সমস্ত মুখে মেখে ১৫
মিনিট রেখে প্রথমে হালকাগরম পানি, পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া
বাঁধাকপির সাহায্যে সুন্দরস্কিন-ফ্রেশনার টনিক বানাতে পারেন নিজ হাতেই।
প্রথমে বাঁধাকপির কয়েকটিটাটকা পাতা
পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে কুচিয়ে ১ কাপ পানিতে কুচানো কপি ফুটিয়েভালো করে
সেদ্ধ করে সেই পানি ভালো ভাবে ছাঁকনিতে ছেঁকে নিন। তৈরি হয়ে গেলআপনার
স্কিন-ফ্রেশনার। মুখ ভালো ভাবে বেসন অথবা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করেধুয়ে একটু
তুলো ঐ পানিতে ভিজিয়ে সারা মুখে, হাতে ও পায়ে লাগিয়ে নিন এবংশুকোতে দিন।
মুখ মুছে ফেলবেন না। এতে এর গুণ নষ্ট হয়ে যাবে। পানি গরমঅবস্থায় দেবেন না।
ঠান্ডা করে দেবেন। যেদিন বানাবেন সে দিন ব্যবহার করবেন।বাসি করবেন না।
১৫. লেটুস পাতা
বাঁধাকপির মতো লেটুস পাতায়ও রয়েছে
ভিটামিন-সি। এছাড়াও আছে ম্যাঙ্গানিজ।লেটুস হজমকারক। তাই লেটুস পাতা খাওয়া
খুবই ভালো। আমরা সালাদে লেটুসব্যবহার করে থাকি। লেটুস দিয়ে আবার
স্কিন-ফ্রেশনার টনিকও তৈরি করা যায়।শীতকালে ঘরে বসেই আপনি স্কিন-ফ্রেশনার
টনিক বানাতে পারেন। বাঁধাকপিরমতোই লেটুস কুচিয়ে পানিতে ফুটিয়ে ভালো ভাবে
সেদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা হলেতুলোয় করে মুখে, হাতে ও পায়ে মেখে নিতে
পারেন।
১৬. মটর দানা
মটরেও রয়েছে নানান ভিটামিন। মটর খেতে আমরা
সবাই ভালবাসি। মটর দিয়েওসুন্দর ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়। তৈলাক্ত ত্বকের
জন্যে মটরের সাহায্যে আপনিসুন্দর ফেসপ্যাক বানাতে পারেন। মটর প্রসেস করে
রেখে বহু দিন ব্যবহার করতেপারবেন।
প্রস্ত্তত প্রণালী
এক কাপ মটর নিয়ে গরুর দুধে সারা রাত
ভিজিয়ে রাখুন। পরেরদিন দুধ থেকে তুলে নিয়ে শুকিয়ে নেবেন এবং এই শুকনো মটর
গ্রাইন্ডারে গুঁড়োকরে অথবা শিলপাটায় গুঁড়ো করে রেখে দিতে পারেন। যখন
প্রয়োজন হবে কিছুটানিয়ে পানি মিশিয়ে পেস্টের মতো করে মুখে লাগাতে পারবেন।
১৫ মিনিটের মতোমুখে রেখে ধুয়ে ফেলবেন। এ প্যাকটি ব্রণের জন্যে খুবই উপকারী।
১৭. পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতার চাটনি অত্যন্ত মজাদার। আর এই
পুদিনা পাতা রূপ চর্চারও অনবদ্যউপকরণ। তৈলাক্ত মুখে সারা সময়ই একটা-দুটো
ব্রণ লেগে থাকে। আর তা সারাতেপুদিনা পাতার জুড়ি নেই। শীতের সময় এর ফলন হয়
বেশি এবং সারা বছরওবাজারে কম-বেশি পাওয়া যায়।
এবার জেনে নিন রূপচর্চায় এর ব্যবহার-
প্রথমে পুদিনা গাছ থেকে শুধু পাতা নিন।
ভালো ভাবে ধুয়ে মিহি করে বেটে পেস্টেরমতো বানিয়ে রাতে মুখে ভালো ভাবে
লাগিয়ে রেখে দিন। পরের দিন ভোরে মুখ ধুয়েফেলুন। এভাবে মাস খানেক লাগানোর পর
দেখবেন আপনার মুখে আর আগের ব্রণনেই। দাগও নেই।
মনে রাখবেন, যেকোনো রূপচর্চাই ধৈর্য ধরে বহুদিন না করলে আপনি তার সঠিকফল ভোগ করতে পারবেন না।
ঘরের জিনিস দিয়েই অনেক কম খরচে সৌন্দর্য
চর্চা করে আপনি হয়ে উঠতে পারেনসুকোমল ত্বকের অধিকারিণী। বিউটি পার্লারে
গিয়ে পয়সা ও সময় নষ্ট করেআপনাকে এসব করতে হবে না। অনায়াসে নিজেই এগুলো তৈরি
করে নিতে পারেন।আর প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি বলে এর কোনো পার্শব প্রতিক্রিয়া
নেই। শুধু দেখেনিন কোনটি আপনার জন্যে বেশি প্রযোজ্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন